নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি ও কি কি

প্রিয় পাঠক আপনি কি নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি ও কি কি সম্পর্কে খোঁজাখুঁজি করছেন বা জানতে চাচ্ছেন ? তাহলে আজকের আর্টিকেলটি আপনার জন্য। আপনি আজকের আর্টিকেলের ভিতরে জানতে পারবেন নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি ও কি কি সম্পর্কিত যাবতীয় সকল তথ্য।
নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি ও কি কি
সেই সাথে আরো জানতে পারবেন নামাজ ভঙ্গের কারণ নামাজের বাহিরের ফরজ ওয়াজিব নামাজের কোন ওয়াজিব ছুটে গেলে করণীয় কি ইত্যাদি সকল তথ্য সম্পর্কে।

পোস্ট সূচিপত্র ঃ নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি ও কি কি

ভূমিকা

প্রিয় পাঠক আমাদের আজকের আর্টিকেলের মূল বিষয়ের বা আজকে আমরা আমাদের আর্টিকেলের ভিতরে আলোচনা করতে চলেছি নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি ও কি কি ও নামাজ ভঙ্গের কারণ নামাজ মাকরূহ হওয়ার কারণ ইত্যাদি সকল তথ্য সম্পর্কে।

আপনি যদি আজকের আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ পড়েন তাহলে আপনি নামাজের ফরজ ওয়াজিব সুন্নত  ভঙ্গের কারণ মাকরু হওয়ার কারণ সাহু সিজদা কখন দেওয়া লাগবে ইত্যাদি এরকম সকল তথ্য সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন।

নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব সম্পর্কে কিছু কথা

নামাজের ফরজ বলতে নামাজ পড়ার আগে কিছু জরুরী কাজ রয়েছে যেগুলোকে ফরজ বোঝাচ্ছে আর নামাজের ভিতরে কিছু কাজ রয়েছে যেগুলোকে ওয়াজিব বোঝাচ্ছে। নামাজের ফরজ বলতে আমরা বুঝতে পারছি যে এটা করা অত্যাবশ্যকীয় এটা না করলে আমার নামাজ হবে না।

কারণ খরচ বলতে আমরা অবশ্যই করনীয় এটাই বুঝি। তো অবশ্যই নামাজের কোন খরচ ছুটে গেলে আমাদের নামাজটা হবে না। সেজন্য আমাদেরকে নামাজের ফরজ সম্পর্কে জানতে হবে তাহলে আমাদের নামাজ না হওয়ার দুশ্চিন্তা থাকবে না।
আর নামাজের মধ্যে নামাজের ওয়াজিব রয়েছে । ওয়াজিব হচ্ছে ফরজের পরের স্থান। আপনি যদি নামাজ পড়ার মধ্যে আপনার যদি কোন ওয়াজিব ছুটে যায় তাহলে আপনাকে সাহু সেজদা করতে হবে।
আপনি যদি সাহস সেজদা না করেন তাহলে আপনার নামাজটি ভঙ্গ হয়ে যাবে বা হবেনা তাহলে অবশ্যই আপনাকে নামাজের ওয়াজিব সম্পর্কে জানতে হবে তো চলুন আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা নামাজের সকল বিষয়ের তথ্য জেনে নিই।

নামাজের ফরজ কয়টি ও কি কি 

নামাজের ফরজ বলতে অত্যাবশ্যকীয় জরুরী বা করাই লাগবে সেটাকে নামাজের ফরজ বোঝাচ্ছে। মানে ধরেন আপনার যদি নামাজের কোন একটি খরচ ছুটে যায় তাহলে আপনার নামাজ হবে না এটা বোঝানো হচ্ছে। নামাজের ফরজ হচ্ছে ১৩ টি। এই ১৩ টি ফরজকে দুটি মাধ্যমে ভাগ করা হয়েছে

আহকাম - ফরজ হচ্ছে ০৭ টি
আরকান - ফরজ হচ্ছে ০৬ টি

নামাজ শুরু হওয়ার আগে বাইরের যেসব খরচ কাজ রয়েছে সেগুলোকে নামাজের আহকাম বলে। নামাজের আহকাম হলো সাতটি । সেগুলো কি কি চলুন বিস্তারিত জেনে নেই ঃ

  • শরীর পাক হওয়া
  • কাপড় পাক হওয়া
  • নামাজের জায়গা পাক হওয়া
  • সতর ঢাকা
  • কিবলামুখী হওয়া
  • ওয়াক্ত মত নামাজ পড়া
  • নামাজের নিয়ত পড়া
এই সাতটি হচ্ছে নামাজের আহকাম বা নামাজের বাহিরে যেসব ফরজ কাজ রয়েছে সে ফরজ কাজগুলো। এর মধ্যে যদি আপনার একটি ছুটে যায় তাহলে আপনার নামাজ হবে না তো অবশ্যই এগুলো খেয়াল করে এ ফরজ গুলো মেনে নামাজ পড়বো ইনশাআল্লাহ।

নামাজের ভিতরে যেসব ফরজ কাজ রয়েছে সেগুলোকে নামাজের আরকান বলা হয়। নামাজের আরকান হইল ছয়টি । নামাজের ছয়টি আরকান কি কি চলুন সেই বিষয়ে জেনে নিন ঃ
  • তাকবীরে তাহরিমা বলা
  • কেরাত পড়া
  • দাঁড়িয়ে নামাজ পড়া
  • রুকু করা
  • সিজদা করা
  • বৈঠক করা
উপরোক্ত ছয়টি বিষয় হলো নামাজের আরকান বা নামাজের ভিতরের ফরজ কাজ এর মধ্যে যদি আপনার একটি ছুটে যায় তাহলে আপনার নাম্বারটি হবে না তো অবশ্যই নামাজের আরকান খেয়াল করে আমরা নামাজ পড়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

নামাজের ওয়াজিব কয়টি ও কি কি

নামাজের মধ্যে টোটাল ১৪ টি ওয়াজিব রয়েছে। ওয়াজিব হচ্ছে ফরজের পরের স্থান। নামাজের মধ্যে যদি আপনার ১৪ টি ওয়াজিবের মধ্যে একটি ওয়াজিব ছুটে যায় তাহলে আপনাকে শাহু সিজদা করা লাগবে। যদি আপনি সাহু সিজদা না করেন তাহলে আপনার নামাজটি হবে না বা ভঙ্গ হয়েছে।সাহু সিজদা কি ?? চলেন এ সম্পর্কে জেনে নিই 

সাহু সিজদা হল নামাজের ভিতর দুইটা অতিরিক্ত সিজদা করা। আপনি নামাজ পড়ার মধ্যে ভুলবশত নামাজের ১৪ টি ওয়াজিবের মধ্যে একটি ওয়াজিব ছুটে গেছে তাহলে আপনাকে শেষ বৈঠকে যেয়ে  তাশাহুদ ( আত্তাহিয়াতু) এ দোয়াটি পড়ার পর ডান দিকে সালাম ফিরিয়ে আপনাকে দুইটি অতিরিক্ত সিজদা করা লাগবে। এটাকেই বলা হচ্ছে সাহু সিজদা।

নামাজের কোন কোন ওয়াজিব বা নামাজের মধ্যে কোন ওয়াজিব গুলো ছুটে গেলে সাহু সিজদা দেওয়া লাগবে চলুন সে বিষয়ে জেনে নেই ঃ

  1. সূরা ফাতিহা পাঠ করা
  2. সুরা ফাতিহার সাথে অন্য আরেকটি সূরা মিলানো
  3. তার দিকের মত নামাজ আদায় করা
  4. প্রথম বৈঠক করা
  5. বৈঠকে আত্তাহিয়াতু পাঠ করা
  6. প্রকাশ্য কিরাত পাঠ করা 
  7. বিনা আওয়াজে কেরাত পাঠ করা
  8. আরকানের শহীদ ভাবে নামাজ আদায় করা
  9. সিজদা থেকে সোজা হয়ে বসা
  10. সালাম বলা
  11. রুকুথেকে সোজা হয়ে দাঁড়ানো
  12. তারতীব বা সকল নিয়ম ঠিক রাখা
  13. ভেতরের নামাজে দোয়ায়ে কুনুত পড়া
  14. ঈদের নামাজে অতিরিক্ত ছয় তাকবির বলা
এই হচ্ছে নামাজের ১৪ টি ওয়াজিব। নামাজের ১৪ টি ওয়াজিবের মধ্যে একটি ছুটে গেলে আপনাকে সাহু সিজদা করা লাগবে। তো নিশ্চয়ই এখন আপনি জেনে গেছেন নামাজের ওয়াজিব গুলো ও সাহু সেজদা কিভাবে করতে হয়। উপরোক্ত বিষয়গুলো পড়ে আপনি নিশ্চয়ই জেনে গেছেন যে নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি ও কি কি।

নামাজের সুন্নত কয়টি ও কি কি 

নামাজের সুন্নত হলো ২১ টি। যে সুন্নতগুলো সহিত নামাজ আদায় করলে নামাজ সুন্দর হবে তাহলে চলুন জেনে নেই নামাজের সুন্নত গুলো কি কি সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য ঃ
  1. আজান ও ইকামত বলা
  2. তাকবীরে তাহরিমার সময় হাত উঠানো
  3. হাত উঠানোর সময় আঙ্গুলগুলি স্বাভাবিক রাখা
  4. ইমামের জন্য তাকবীর গুলো উচ্চসারে বলা
  5. সানা  পড়া
  6. আউযুবিল্লাহ পড়া
  7. বিসমিল্লাহ পড়া
  8. আসতে আমীন বলা
  9. ছানা আউযুবিল্লাহ বিসমিল্লাহ আসতে বলা
  10. হাত বাধার সময় বাম হাতের উপর ডান হাতে রাখা
  11. পুরুষের জন্য নাভির নিচে আর মহিলার জন্য নাভির উপরে হাত রাখা
  12. এক রোকন থেকে আরেক রোকন যাওয়ার সময় আল্লাহু আকবার বলা
  13. একা নামাজ পড়লে রুকু থেকে উঠার সময় সামি আল্লাহু লিমান হামিদা বলা
  14. রুকুতে সুবহানাল্লাহ রাব্বিয়াল আজিম বলা
  15. রুকুতে উভয় হাটু আঁকড়ে ধরা
  16. সিজদায় বলা াক সুবহানা রব্বিইয়াল আলা বলা
  17. রুকুতে পুরুষের জন্য উভয় হাতের আঙ্গুল ফাঁকা রাখা
  18. পুরুষের জন্য নামাজে বসার সময় বাম্পা বিছিয়ে তার উপরে বসা এবং ডান পা খাড়া করে রাখা
  19. শেষ বৈঠকে তাশাহুদ এর সাথে দুরুদ শরীফ পড়া
  20. দুরুদের পর দোয়া পড়া
  21. তাশাহুদে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলার সময় শাহাদাত তর্জনী আঙ্গুলটি কিবলার দিকে ইশারা করা।

নামাজ মাকরূহ হওয়ার কারণ 

নামাজ মাকরূহ হওয়ার কারণ অনেক রয়েছে। যেকোনো একটি কারণে আপনার নামাজগুলো মাকরূহে যেতে পারে। তাহলে চলুন জেনে কি কি কারণে নামাজ মাকরূহ হতে পারে ইত্যাদি সেরকম সকল তথ্য সম্পর্কে ঃ

  • নামাজরত অবস্থায় শরীর বা কাপড় নিয়ে খেলা করা
  • কোমরে হাত রাখা
  • আঙ্গুলসমূহ কে ময়লা বা ট্রেনে ফুটানো
  • সিজদার স্থান থেকে কোন কিছু সরানো
  • নামাজরত অবস্থায় ডানে বা বামে ঘাড় ঘোরানো
  • উবায় হাটু খাড়া করে হাত মাটিতে রেখে পায়ের উপরে বসা
  • সেজদায় দুই হাত মাটিতে বিছিয়ে দেওয়া বা মাটিতে লাগিয়ে রাখা
  • হাতের ইশারায় সালাম দেওয়া
  • মাটি লেগে যাবে এ ভয়ে কাপড় হেফাজত করা
  • ফরজ নামাজ বিনা ও জোরে পড়া
  • হাই তোলা
  • শরীরের সাথে দূর করার জন্য শরীর মোচড়ানো
  • চোখ বন্ধ রাখা
  • চুল উপরে করে সিজদা করা
  • আয়াত ও তাসবীহ হাতে গণনা করা
  • মানুষ অথবা জন্তুর ছবি র কাপড় পরিধান করে নামাজ পড়া
  • সামনে বামে ডানে যদি কোন প্রকার ছবি থাকে তাহলে নামাজ মক্র হয়
  • কাতার থাকা সত্ত্বেও পিছনে একা দাঁড়ানো
এসব কারণে আপনার নামাজটি মাকরূহ হতে পারে ইনশাল্লাহ আমরা এসব অভ্যাসগুলি দূর করে নামাজ পড়বো না হয় আমরা সঠিক নিয়ম শুদ্ধভাবে নামাজ পড়ার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ। 

নামাজ ভঙ্গের কারণ 

নামাজ ভঙ্গের কারণ এ বাক্যটাতেই আমরা বুঝতে পারছি যে কি করলে আমাদের নামাজটি ভঙ্গ হয়ে যেতে পারে তাহলে অবশ্যই এ বিষয়ে আমাদেরকে জেনে রাখতে হবে না হলে আমাদের নামাজটি ভঙ্গ হয়ে যাচ্ছে আমরা বুঝতেই পারবো না। তাহলে অবশ্যই চলেন জেনে নিই নামাজ ভঙ্গের কারণগুলিঃ

  • নামাজ অবস্থায় সালামের জবাব দিলে
  • নামাজের মধ্যে সালাম দিলে
  • দুঃখ সুযোগ শব্দ উচ্চারণ করা
  • নামাজের ফরজ ছুটে গেলে
  • কিরাতে ভুল করলে
  • নামাজে কি রাত দেখে পড়া
  • নামাজের মধ্যে কথা বলা
  • নেশাগ্রস্ত অবস্থায় নামাজ পড়া
  • উচ্চস্বরেও অট্টহাসি হাসলে
  • অপ্রাসঙ্গিক কিছু করলে
  • অন্যদিকে ঘুরে গেলে
  • আমলে কাশির হলে
  • অপবিত্র স্থানে সিজদা করলে
  • চলাফেরা করলে
  • হাঁচির জবাব দিলে
  • নিজের ইমাম ছাড়া অন্যকে লোকমা দিলে
  • নামাজে দুনিয়াবি কথা বললে
  • কাতার সোজা না করে নামাজ পড়া
  • বিনা ও জুতা নামাজ পড়া
  • তিন তাসবি না পড়লে
  • নামাজে খাওয়া বা পান করা
আরো অনেক কারণ রয়েছে। আপাতত এসব কারণগুলি আমরা লক্ষ্য করে নামাজ ভঙ্গ হওয়ার কারণ হিসেবে। তো অবশ্যই এসব কারণগুলো আমরা ভাই অভ্যাসগুলো দূর করার চেষ্টা করব আর এসব অভ্যাস দূর করে নামাজ পড়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ ।

শেষ কথা ঃ নামাজের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি ও কি কি  

আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি নানামাজের ফরজ ও ওয়াজিব কয়টি ও কি কি ইত্যাদি সম্পর্কে। এসব কারণগুলি অতীব জরুরী। অবশ্যই এসব বিষয়গুলো জেনে রাখি। কারন নামাজ পড়তে হলে আপনাকে এসব নিয়ম গুলো জানতে হবে অন্যথায় না হলে আপনার নামাজও নাও হতে পারে। 

আপনি যদি এসব সম্পর্কে না জেনে থাকেন তাহলে উপর থেকে আর্টিকেলটি সম্পূর্ণ করে আসো তাহলে আপনি নামাজের ফরজ ওয়াজিব সুন্নত মাকরুহ ও ভঙ্গের কারণগুলো জানতে পারবেন। তো আশা করি আপনি এসব সম্পর্কে বুঝতে পেরেছেন।

মহান রাব্বুল আলামিন আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে এসব নিয়ম মেনে এবং যেসব অভ্যাসের কারণে নামাজ মাকরূহ বা ভঙ্গ হতে পারে সেসব অভ্যাস থেকে দূর করে আমাদেরকে প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার তৌফিক দান করুক।  (আমিন)

আজকের আর্টিকেলটি আপনার কেমন লাগলো সে সম্পর্কে আপনার মূল্যবান মতামতটি জানিয়ে দিন আমাদের কমেন্ট বক্সে এবং সেই সাথে এই আর্টিকেলটি শেয়ার করে ছড়িয়ে দিন আপনার বন্ধু বান্ধবের কাছে যাতে তারাও নামাজের এসব বিষয় সম্পর্কে অবগত হতে পারে।
আজকের এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

লার্নিং পয়েন্ট ২৪ নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url